মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

ফেনীর হাজেরা এখনো স্বামীর ফোনের অপেক্ষায়..

বিশেষ প্রতিনিধিঃ এখনো স্বামীর ফোনের অপেক্ষায় ফেনী জেলার সোনাগাজির নিয়ামতপুরের বিবি হাজেরা। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। রাত সাড়ে ৯টার একটু আগে পুরনো ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় স্বামী ইব্রাহিমকে ফোন করেন হাজেরা।

স্বামী জানান, দোকানে কাস্টমারের ভিড়। রাত ১১ টার দিকে ফ্রি হয়ে ফোন দিবেন। কিন্তু সেই ফোন আর পাননি হাজেরা। এখনো আশায় থাকেন, এই বুঝি প্রিয়তম স্বামী তাকে ফোন দিবেন।

সেদিন রাত ১১ টার আগেই চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনে মারা যান ইব্রাহিম। মারা যান চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের দারোয়ান বাবা সুজল হক, দেবর মো. আনোয়ার। সেদিনের সর্বনাশা অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান।

হাজেরা বলেন, ‘সেদিন রাত ৯ টা ২৭ মিনিটের দিকে আমি তাকে ফোন দেই। দোকানে অনেক কাস্টমার ছিল। এজন্য বেশি কথা বলতে পারেনি। আমাকে বলে, এখন বেশি কথা বলবো না। ১১ টার দিকে ফ্রি হলে তোমাকে ফোন দিবো। কিন্তু তার সাথে আর কথা বলতে পারলাম না।’

ফেনী জেলার সোনাগাজির নিয়ামতপুরের ইব্রাহিমের বাড়ি। বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছেন। বিবি হাজেরা তার দুই মেয়ে মাইমুনা আক্তার (৮) এবং তানিশাকে (৪) নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। ইব্রাহিম প্রতিদিন কয়েকবার ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিতেন। টাকাও পাঠাতেন। তাতে ভালোই চলে যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু স্বামীকে হারিয়ে এখন অভাব অনটনে কাটছে তাদের জীবন। হাজেরার ভাষ্যে, ভিক্ষুকের মত ভিক্ষা করে খেতে হচ্ছে তাদের।

হাজেরা বলেন, ‘মেয়ে দুইটার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ঠিকমত তাদের মুখে খাবার দিতে পারি না। এবাড়ি ওবাড়ি কাজ করি। যা পাই তাই দিয়ে কোনমতে চলছে। যেদিন কাজ থাকে না সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়। মানুষের তো একদিক না একদিক শান্তি থাকে। আমার কোনো শান্তি নাই। একদিকে স্বামীর কষ্ট, আরেকদিকে টাকার কষ্ট। কীভাবে মেয়েদের নিয়ে বাঁচবো?’

হাজেরার ভাই নুরনবী বলেন, ‘৬ সদস্যের সংসার আমাদের। বাবাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো না। আগুন লাগার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ দিয়েছে। সেখানে মাসে ১২/১৩ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে তো সংসার চলে না। বাবা ও দুলাভাই মারা যাওয়ার পর তাদের নিয়ে চিন্তা করতে করতে মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার ওষুধ কিনতে হয়। অনেক কষ্টে আছি। বোন, ভাগ্নিকে যে একটু দেখবো সেটাও পারছি না। এমন জীবন যেন আর কার না হয়।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com